অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে সরাসরি জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

মোকলেছুর রহমানঃ রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যারা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে সরাসরি জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পেট্রোল বোমা ও ককটেল তৈরির কারিগরদেরও পিছু নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই নাশকতাকারীদের থানাভিত্তিক তালিকাও তৈরি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশের হাতে থাকা তালিকায় বিরোধী দল বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের থানা ও ওয়ার্ডভিত্তিক কিছু নেতাকর্মী ছাড়াও মাদকাসক্ত এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নাম উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সবসময়ই পুলিশের কাছে অপরাধীদের তালিকা থাকে, যাদের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এমন তালিকাও থাকে। নানা পরিস্থিতিতে সেই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, পেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এর নেপথ্যে কারা এবং এ ধরনের নাশকতায় কারা সরাসরি জড়িত, সে তালিকাও তৈরি হচ্ছে। এটি সবসময়ই হালনাগাদ করা হচ্ছে। পুলিশের তালিকায় এখন পর্যন্ত এ নাশকতাকারীদের সংখ্যা কত, তা আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কোনো কর্মকর্তাই বলছেন না। তবে সূত্রগুলো বলছে, রাজধানীর প্রতিটি ক্রাইম বিভাগে গড়ে অর্ধশতাধিক করে ব্যক্তির তালিকা রয়েছে, যারা অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত বা জড়িত হতে পারে। এর মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কদমতলী, শ্যামপুর ও ওয়ারী এলাকায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই অন্তত ৪০ জনের সন্ধান মিলেছে। ওই গ্রুপের অ্যাডমিন সদস্যদের বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে, নানাভাবে উসকানিও দিচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরা এলাকার বিভিন্ন থানায় অন্তত ৪০ জনের তালিকা করা হয়েছে। তবে এই তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খ. মহিদ উদ্দিন দৈনিক কালবেলাকে বলেন, যানবাহনে অগ্নিসংযোগে সরাসরি জড়িত অনেককেই ধরা হয়েছে। অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকের বিষয়ে তথ্য রয়েছে, তাদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হাতেনাতে যেসব নাশকতাকারী যারা ধরা পড়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অনেকের নাম জানা যাচ্ছে। তা ছাড়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেও অনেকের নাম আসছে। এসব তথ্য সমন্বয় করে নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্র জানায়, সার্বিক পরিস্থিতিতে বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসবে, নাশকতাকারীদের অপতৎপরতাও বাড়তে পারে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে এখন থেকেই নাশকতায় সরাসরি জড়িতদের তালিকা ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিস্ফোরকের বৈধ আমদানি এবং খুচরা কারখানায় বিক্রির জন্য খোলা বাজারের বিস্ফোরকের দিকেও পুলিশ নজরদারি রাখছে।পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে পুলিশ নিরাপত্তা সহায়তা করবে, যা আগেও করেছে; কিন্তু এই রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ অগ্নিসংযোগ করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, তা সহ্য করা হবে না। এ ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে দেশের থানাগুলোতে নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাব ও বিজিবিও দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ জানায়, গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর মিরপুরে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। ভাসানটেক এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিচতলায় ককটেল ও পেট্রোল বোমা নিয়ে অবস্থান করার সময়ে মাহফুজ হোসেন মুনা, ইয়াছিন, ফরহাদ, মো. মাহি, আওলাদ হোসেন, মো. নাছিম, আমজান আলী হোসেন ও তানভীর হোসেন নামে ৮ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। তাদের কাছ থেকে বোমা ও ককটেল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। ওই রাতে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় দুটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূলহোতা রূপনগর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে অবরোধের মধ্যে মুগদায় বাসে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে মিজানুর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে অনেকের নাম পাওয়া যায়।ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নাশকতাকারীরা বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে। বিভিন্ন নাশকতার নির্দেশনা ও পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সাইবার পুলিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করার জন্য সব সময়েই সাইবার স্পেসে টহলে থাকে। এ ধরনের তথ্য পেলে পুলিশের অপারেশন্স বিভাগকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করা হচ্ছে। এদিকে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, নাশকতা, ভাঙচুর ও বোমা বানানোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে র্যাব তৎপর রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২২ নাশকতাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুরে অভিযান চালিয়ে আশুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়াও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় একটি মার্কেটের ছাদ থেকে পেট্রোল বোমা ও ককটেল তৈরির সরঞ্জামসহ রুবেল, মারুফ খান, আল আমিন ও হৃদয় সরদার নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১০টি পেট্রোল বোমা, ৪টি ককটেল, ৯০ গ্রাম গান পাউডার ও দুই লিটার পেট্রোল জব্দ করা হয়।
ব্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা নাশকতার উদ্দেশ্যে ছাদের ওপরে পেট্রোলবোমা ও ককটেল তৈরি করছিলেন। যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সভাপতি অপু এবং সহসভাপতি ফাহিমের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধোলাইপাড়, গোলাপবাগ, ডেমরা, দনিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা করে আসছিলেন তারা।র্যাব সদর দপ্তর জানায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে পরবর্তী সময়ে হামলা, নাশকতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় জড়িত ৪৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ব্যাব।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ