সুন্দরবনের বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ হলো না! পুলিশের হাতে আটক তিনজন,জব্দ হয়েছে ২ টা ইজিবাইক,বিষের বোতল,
সুন্দরবনের বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ হলো না!পুলিশের হাতে আটক তিনজন,জব্দ হয়েছে ২ টা ইজিবাইক,বিষের বোতল,
জিএম জিয়াউল হাসান জিল্লুর (কয়রা )প্রতিনিধি
ঃ বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে মাছের সাথে সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণী মারা যেয়ে একদিকে যেমন পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে শিকার করা মাছ খেয়ে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু জেলে নদী-খালে মাছ ধরতে গিয়ে প্রায় সব জলজ প্রাণী মেরে ফেলছেন। কারণ জাল দিয়ে মাছ ধরার বদলে বিষ প্রয়োগ করছেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা
গত কাল কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমানের নির্দেশে কাশিয়াবাদ পুলিশ ফাঁড়ির এস আই পাইক দেলোয়ার হোসেন ( নিঃ )অভিযান পরিচালনা করে ২০০ কেজি বিষ প্রয়োগকৃত মাছ, ১ টি বিষের বোতল দুইটা ইজিবাইক সহ ৩ জনকে আটক করে। আটক ব্যাক্তিরা হলো ১/ তরিকুল ইসলাম (২৭)২/ আবুল হাসান (২৪) ৩/ আবু সিদ্দিক (২৪) জানা গেছে ৮ ই আগষ্ট মঙ্গলবার সকালে ৭:৩০ সময় ৬ নং কয়রা শাকবাড়ীয়া এলাকায় পুলিশের অভিযানে আটক হয়। সুন্দরবনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দীর্ঘ দিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নদ নদীতে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ ধরে বলে জানা গেছে । অনেক সময় সুন্দরবনের ডাকাত, বনবিভাগ, রাজনৈতিক নেতা আর মহাজন নামক দাদন ব্যবসায়ীদের প্রভাবের কারণে জেলেরা খুব সহজে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে। এ কারণে কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার। আটককৃতদের শিকার উক্তি মোতাবেক কয়রা থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে।
জানা যায়, সুন্দরবনের নদী-খালে কীটনাশক (বিষ) প্রয়োগ করে অবাধে মাছ শিকার করছেন একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। এতে ধ্বংস হচ্ছে লাখ লাখ রেণু পোনা।
আশঙ্কাজনকভাবে মাছের বংশবিস্তার নষ্ট হচ্ছে। সুন্দরবনের ঝনঝনিয়া খাল, শ্যালা নদীর হরিণটানা এলাকা, সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের ঝাপসি, ভদ্রা, হাডড়া, চাইলোবগী, নিষেনখালী, সাহেবখালী, বোটবুড়নিয়া, পাটকোষ্টা, হংশরাজ, পাঠাকাঠা, ভোমরখালী, আইড়ো শিবসাসহ বিভিন্ন স্থানে বিষপ্রয়োগে মাছ ধরেন জেলেরা। এসব এলাকার মধ্যে বেশকিছু নদী ও খাল অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রজনননের কারণে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বনবিভাগ থেকে মাছ শিকারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বনের অভ্যন্তরের বেশ কিছু নদ-নদী ও খালকে। সুন্দরবন বিভাগ সূত্র জানায়, পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগ মিলিয়ে পুরো সুন্দরবনের অভ্যন্তরে থাকা মোট চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ১৮টি খালে সব ধরনের জেলে প্রবেশ ও মাছ ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মাছ শিকারের জন্য সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় কীটনাশকের যেকোনো দোকানে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে মাছ শিকারের বিষ। এসব বিষ কিনে জেলেরা নদীতে প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে।
এ ব্যাপারে কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন সুন্দরবন সহ আশেপাশের বিভিন্ন খালে ও নদীতে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ বন্দ করতে পুলিশের অভিযান চলমান। মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ বিষ দিয়ে মাছ আহরণ সহ সকল অপরাধ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পরিবেশ সুরক্ষায় দৈনিক আলোর খবরকে
কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারিক লিটু বলেন ফসলের পোকা দমনে ব্যবহৃত বিষসহ বিভিন্ন কীটনাশক মাছ শিকারে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে সুন্দরবনের মৎস্য ভাণ্ডার এখন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, অসাধু জেলেরা বন বিভাগের সহায়তায় সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালগুলো থেকে অবাধে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে।