দিঘলিয়া এম এ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সফল প্রধান শিক্ষকের কর্মজীবন সমাপ্তি
দিঘলিয়া এম এ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সফল প্রধান শিক্ষকের কর্মজীবন সমাপ্তি
মোঃ মনিরুল ইসলাম মোড়ল,দিঘলিয়া খুলনা।খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিরুল ইসলামের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সফল সমাপ্তি হলো অডিটর(এজিবি)পদে সরকারি চাকুরী পান কিন্তু তার পিতার ইচ্ছায় শিক্ষকতার মহান পেশায় ১৯৮৭ সালের ২০ অক্টোবর খুলনা মহানগরের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মহেশ্বরপাশা কৃষ্ণমোহন হাই স্কুলে গণিত শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ২০০৪ সালে একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে ১৭ বছর এবং প্রধান শিক্ষক হিসাবে ৫ বছর মোট ২২ বছর তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কর্মরত ছিলেন।এরপর তিনি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ০১/৭/২০০৯ খ্রি: তারিখ প্রধান শিক্ষক হিসাবে খান নজরুল ইসলাম স্থলাভিষিক্ত। তার দক্ষ নেতৃত্বে শিক্ষা,সহশিক্ষা কার্যক্রমে উপজেলা,জেলা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রেখে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছে।এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে ১৯১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক”শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ” নির্বাচিত হয়।জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে “খুলনা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান” নির্বাচিত হয় ২০১৯ সালে এবং “উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ” নির্বাচিত হয় ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে।” জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ” হয় তার বিদ্যালয় ৪৩ তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এবং প্রতি বছরই শিক্ষার্থীরা জাতীয় খেলাধুলায় উপজেলা,জেলা, অঞ্চল এবং জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে চলেছে।আন্তর্জাতিক সানকো স্কাউটস জাম্বুরি-২০১৯ স্কাউটস দল”তৃতীয় স্থান” এবং আন্তর্জাতিক এশিয়া প্যাসেফিক স্কাউটস জাম্বুরি-২০২৩ এ স্কাউটস দল সেরা দশের “এওয়ার্ড অর্জন” করে।বাংলাদেশ স্কাউটস এর সর্বোচ্চ “প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেছে ০৫ জন । জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৬ হতে ২০২৩ পর্যন্ত স্কাউসের বিভিন্ন প্রতিয়োগিতায় উপজেলা, জেলা,অঞ্চল পর্যায়ে সম্পূর্ণ অর্জন করে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করছে। তিনি খুলনা বিভাগের “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান” এবং খুলনা জেলার “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান ” নির্বাচিত হয়েছেন জতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ সালে।২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় প্রতিবার উপজেলায় “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান” নির্বাচিত হয়েছেন।পেশাগত এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি নায়েম, এইচএসটিটিআই হতে প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা,অধিদপ্তর অধীন কারিকুলাম এর উপর “প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাস্টারট্রেনার” এর দায়িত্ব পালন করেছেন। , যশোর শিক্ষা বোর্ডের উচ্চতর গণিতের পরীক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।বিদ্যালয় ২০১০ সালে মডেল স্কুল প্রকল্প ভূক্ত হয়। কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম,বিজ্ঞানাগার সহ অবকাঠামোগত ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিদ্যালয় অঙ্গন সবুজে ঘেরা, পরিপাটি, মনমুগ্ধকর অপরূপ পরিবেশ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনে প্রধান শিক্ষক হিসাবে মো: আমিরুল ইসলামের নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা,বারবার প্রশংসিত হয়েছে।তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস খুলনা জেলার সাধারন সম্পাদক, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি; দিঘলিয়া(উত্তর)সর: প্রা: বিদ্যালয়ের সভাপতি; বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি; গণিতবিদদের সংগঠন “গণিত ফোরাম খুলনা”এর সহ-সম্পাদক ইত্যাদি সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়জিত রেখেছেন।মোঃ আমিরুল ইসলাম ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়া এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে ১৯৮০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান গ্রুপে ৪ টি বিষয়ে (গণিত, রসায়ন,জীব ও উ:গণিত) লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ন। সরকারি বিএল কলেজ হতে এইচএসসি এবং বিএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি গণিতে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি বিএড, এলএলবি এবং ইংরেজি বিষয় সহ দুটি বিষয়ে মাষ্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি ১৯৬৪ সালে খুলনা জেলার দিঘলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মুন্সি মো: ছাইদ শেখ, মাতা- আলহাজ্ব জরিনা বেগম। দাদা মাওলানা হারিছ উদ্দিন, ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন এবং পেশায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তারা সাত ভাই, দুই বোন সকলে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তিন ভাইবোন শিক্ষক, এক ভাই চিকিৎসক(শিশু বিশেষজ্ঞ) এবং তিন ভাই প্রকৌশলী। তার গর্বিত মাতা ২০২৩ সালে সফল জননী হিসেবে “খুলনা জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা” সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।মোঃ আমিরুল ইসলামের সহধর্মিণী নাজমা বেগম রেখা এম.এ. খুলনা শিল্প অঞ্চলের এককালের প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশন(BCIC) এর কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে। মোঃ আমিরুল ইসলাম এক কন্যা সন্তানের জনক। এই মেধাবী মানুষটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর ২ মাস ১৫ দিনের শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। পেয়েছেন যথাযোগ্য সন্মান ও সম্মাননা।ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তার প্রিয় শিক্ষক জনাব খান নজরুল ইসলামের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পাশে থেকে সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য এবং ধন্যবাদ জানান বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের।অশ্রুসিক্ত নয়নে, সহকর্মীদের অশ্রুভেজা কান্নার এক আবেগঘন পরিবেশে ০৪/০১/২০২৪ ইং তারিখ মো: আমিরুল ইসলাম শিক্ষকতার এই মহান পেশাকে বিদায় জানান।একজন মেধাবী সফল প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিদায় ক্ষণে ম্যানেজিং কমিটি, সহকর্মী, বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ এবং সকল শুভানুধ্যায়ীগণ তার শারীরিক সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং মঙ্গল কামনা করেন।