খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলা খাবার নিয়ে জনমনে বিতর্কিত ঝড়
খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলা খাবার নিয়ে জনমনে বিতর্কিত ঝড়,,
***মোকলেছুর রহমান ****
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরকারি প্রতিষ্ঠান।এটা রক্ষণাবেক্ষণার দায়িত্ব আমাদের সবার?কোন ব্যক্তিমতের ইচ্ছায় চলতে পারে না সরকারি প্রতিষ্ঠান।
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার নিয়ে ও ডাক্তারদের ডিউটি চলাকালীন সময়ে চায়ের আড্ডা, রোগীদের সাথে অশুভ আচারণ এবং এ নিয়ে স্থানীয় জনগনের মধ্যে বিতর্কিত মতামত।
গত ইং ২৯ জুন রোজ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল আযহার দিন। মুসলিম জাতি যথাযথ মর্যাদায় পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেছেন।
ইসলামিক ফাউণ্ডেশন সুত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবার দেশের মুসলিমরা পশু কোরবানি করতে পারবেন।
আজ দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, দুপুরের খাবার হিসাবে তালিকায় একটুকরো আলু ও ছোট্ট একখন্ড শিশু রিফাতের জাতীয় মাছ মাংঙ্গাশ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।
গত কাল বৃহস্পতিবার ঈদের দিন, সরজমিনে উপস্থিত হয়ে ও রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,
ঈদ উপলক্ষে সকালে শিমাই ও চমচম মিষ্টি দেওয়া হয়।
পরে ইদের দিন দুপুরের খাবারের খোজ নেওয়া হয় এবং হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, ডাল খিচুড়ি মার্কা বিয়ারানি,সাথে ছোট্ট এক টুকরো পোল্ট্রি মুরগীর মাংস। কেহ বলছে ব্রিয়ানি, আবার কেহ বলছে,পলোয়ার ভাত।ঈদ উপলক্ষে রাতেও দুপুরের মত একই খাবারের পরিবেশন করা হয়।
একাদিক রোগীরা গোপনে ও প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সাথে অভিযোগ করে বলেন, নামের বিরিয়ানিতে চরম দুর্গন্ধ।খুব নিম্নমানের পুরানোযুক্ত চাল দিয়ে এ বিরিয়ানি তৈরি করা হয়েছে।এটা খেলে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তাছাড়া আজকে হাসপাতালের খাবারের তালিকায় ঈদের দিনের জন্য বিরিয়ানি দেওয়ার কথা রয়েছে তাই, নিয়ম অনুযায়ী দায়সরা বিরিয়ানি তৈরি করে,রোগীদের সামনে নাম করা হয়েছে।যাহা খুবই দুঃখ জনক ঘটনা।
হাসপাতালের মধ্যে এক রোগীর স্বজন সাংবাদিকদের দেখে দৌড়িয়ে কাছে আসেন, এসেই পিস পিস করে, ভয় ভয় করে, এদিক ওদিক তাকিয়ে বলেন, আপনাদের সাথে সত্যি কথা বললে ওরা পরে আর আমাদেরকে দেখবে না।তাই আপনারা সাংবাদিকরা মাঝে মাঝে হাসপাতালে ঘুল্লি দিলে আমাদের মত গরীব রোগীরা সুস্থ থাকবে।
তাছাড়া এটা সরকারি হাসপাতাল এখানে কোন বড় লোক ধনীরা ভর্তি হয়ে থাকে না। আর যদিও থাকেন, সরকারি কেবিনে টাকা দিয়ে থাকেন।যত ঝামেলা বেকায়দা সব গরীবের।গরীব হয়ে জন্ম নেওয়াই একটি বিপদ।
হাসপাতালে রোগীদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে জানা যায়, হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে খাবারের চালে খুব দুর্গন্ধ।রোগীদের খেতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।ভাত খেতে যদি দুর্গন্ধযুক্ত না হতো! তাহলে তরকারি যাহা দিতো, তাই খাওয়া সম্ভব হতো। চালটা ভালো হলে ভাতটা ভালো হয়, পানি ও লবণ দিয়ে ভাত খাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু, চালের অবস্থা এমন হলে কোন ভাবেই ভালো তরকারিতেও সম্ভব নয়। এ হাসপাতালে আবার এখানে একাধারে পাংঙ্গাশ আর আলু খাবারের তালিকায় রয়েছে।যাহা অন্য হাসপাতালের থেকে ব্যাতিক্রম।
আবার এ হাসপাতালে মাঝে মাঝে মাংশের নামে চড়াই পাখিকে দু ভাগে ভাগ করলে যা হয়!তার এক টুকরো মাংশ দেওয়া হয়। এটাই কি হাসপাতালের মাংশ দেওয়ার নিয়ম?
এতে করে এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত হাসপাতালের রোগীও স্বজনদের সাথে ঘটছে।হাসপাতালের রোগী ও স্বজনেরা ভয়ে কিছু বলতে পারে না। তারা মুখখুল্লে পাবে না মোটেও সেবা। অবহেলা আর অসুস্থতায় ভুগতে হবে।
অন্য দিকে ডাক্তারদের ডিউটিতেও অবহেলার প্রমাণ মিলেছে।সঠিক নিয়ম অনুযায়ী রোগীদের সেবা না দেওয়ার একাদিক অভিযোগ খোঁজ খোঁজ মিলেছে।ডাক্তারদের ডিউটি চলাকালিন সময়ে চায়ের দোকানে, চায়ের আড্ডায় বসে সময় পার করার প্রমাণও মিলেছে।
তাছাড়া এ হাসপাতালের সরকারি ডাক্তারা, হাসপাতালের ডিউটি চলাকালিন সময়ে ডিটটি না করে। সামনের প্যাথলজিতে গিয়ে ডিউটির সময় বিভিন্ন কারণে এসে রোগীদের নিয়ে প্যাথলজিতে সাক্ষাৎ দিয়ে যায়।
তাছাড়া একটি বিষয় বিশেষ ভাবে নজরে পড়েছে,তা শুধু দুঃখ জনক ঘটনা, বহিরাগত টিকিট হাতে নিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী ডাক্তারকে খুঁজত খুঁজতে বাইরে রাস্তার মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রোগীর সাথে কথস বলে জানা যায়, চায়ের দোকানের সামনে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি স্যার চা খাচ্ছেন।
দেখা গেল হাসপাতালের সুযোগ্য ডাক্তার অযোগ্য হয়ে ওষুধ কোম্পানির ভদ্রলোকদের সাথে অফিস সময় চায়ের মজার আড্ডায়।
পরে এমন অবস্থার মহূর্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে, কোন কথা না বলে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। ডাক্তারের পিচে পিচে গেলে দেখা মিললো, ডাক্তারের চেম্বারের সামনে রোগী এদিক ওদিক, ও চেম্বারের উপর কিছু প্রেসক্রিপশন নামের স্লিপ, যাহা পড়ে আছে। দেখা গেল, শুধু শুধু উপরে চলছে বিদ্যুৎতের ফ্যান।
কিছুক্ষন পরে দেখা গেল,রোগীদের সাথে ঠেলাঠেলি। কারা এরা?কেনই বা ঠেলাঠেলি? কাছে গিয়ে দেখা গেল, এক ঝাঁক প্যান্ট শার্ট সু পরা ওষুধ কোম্পানির ভদ্রলোকেরা।
দেখা গেল, ডাক্তার সাহেব রাগীও দেখছেন, আবার কোম্পানিকেও সামাল দিচ্ছেন।স্যার এটার সাথে এটা,এটার কাজ খুব, স্যার একটু খেয়াল করবেন।এসব কথা আমার নয়, একজন শার্ট প্যান্ট পরা ভদ্রলোকের।
বাহা খুব ভালো দৃশ্য, দেখা গেল, ডাক্তার সাহেব রোগীকে কি ওষুধ লিখেছেন, তার ছবিও তুলছেন ওষুধ কোম্পানির ভদ্রলোকগুলো।
পরিচয় গোপন রেখে জানা গেল,কমিশনের মাধ্যমে খুলে নিয়েছে নিজ নিজ নামে ব্যবহার করা প্যাথলজি। যেখানে পরীক্ষা নিরিক্ষা না করলে রোগী পড়ে বিপদে।যথাযত কোম্পানির ওষুধের নাম না লিখলে পায় না কমিশন।আবার যথাযত ক্লিনিকে রোগী পাঠালে পায় কমিশন।আবার এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে যে, অন্য কোন ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করলে অগ্রহণযোগ্য।দেখা হয় না পরীক্ষা নিরিক্ষার পত্র।সব ভুল বলে, আবার ছুড়ে মারা হয় রোগীর দিকে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এক স্বজন পানখালী গ্রামের রেবেকা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আমরা আজ আট দিন। আজ শুক্রবার আমার রোগীকে ছাড়াপত্র দিয়েছেন।
আমার রোগীর জরায়ুর অপারেশন করা হয়েছে।চালনা ক্লিনিক থেকে ডাঃ সন্তোষ স্যার থেকে কোন ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করেছেন।আমরা গরীব মানুষ অনেক টাকা খরচ হয়েছে। অপরেশনের তিন দিন পরে এ হাসপাতালে আমরা এসে ভর্তি হই।
তিনি আরো বলেন, দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারা ঠিক মত রোগীর প্রতি খেয়াল রাখেনা। ডাক্তারদের ডিউটি চলাকালিন রুমে পাওয়া যায় না। তারা এচায়ের দোকানে ওচায়ের দোকানে, চায়ের আড্ডায় বসে সময় কাটায়।
তাছাড়া এ হাসপাতালে অধিকাংশ অল্প বয়সের নার্স। পুরনো নার্স রয়েছে কয়েক জন। পুরনো নার্স যারা তারা খুব ভালো। কিন্তু, নতুন কিছু সুন্দরী নার্সদের কাছে একটি বিষয় বুঝতে না পারলে,পরে সেই বিষয় নিয়ে তার কাছে গেলে রাগারাগি করেন।
উপরোক্ত সকল অভিযোগ নিয়ে দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ সুদীপ বালার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি এখানে সাত মাসের মত, এখানে আমি আসার পূর্বে অনেক সমস্যা ছিলো,সেগুলো পুরোপুরি সমাধান না করতে পারলেও, কিছু কিছু সমাধান করছি।
তাছাড়া ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে আমাকে কেহ কিছু বলি নাই। আমার কাছে কেহ এমন অভিযোগ নিয়ে আসিনি। তবে এটা যদি সত্য হয়, আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
তিনি আরো বলেন,আর একটি বিষয়, হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যে কথা হয়েছে বা হচ্ছে, আমি যতটুকু জানি অতিশীঘ্র সরকারী চালকের জন্য নিয়োগ হবে।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাবারের বিষয়টি নিয়ে,আমি নিজে বার বার বলেছি। আমি বর্তমান দায়িত্বরত টিকাদারকে খাবারের বিষয় দু বার চিঠিও দিয়েছি।তারা আমাকে কোন সাড়া দেয়নি। আমি এ বিষয়, উপর মহলকে অবগত করেছি। আসা করি বিষয়টি উপর মহল ওনারা দেখবেন। তাছাড়া আমি প্রতিদিন খাবারের তালিকা দেখি এবং খাবারের মালামাল আমার হাসপাতালের কতৃপক্ষ বুঝে নেন।