কয়রায় কপোতাক্ষ নদের চর শিবির পরিচালিত বন্ধন তরুণ সংঘের কব্জায়।
কয়রায় কপোতাক্ষ নদের চর শিবির পরিচালিত বন্ধন তরুণ সংঘের কব্জায়!
জি এম জিয়াউল হাসান জিল্লুর, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
“”সতত হে নদ পড় মোর মনে,
সতত তোমারই কথা ভাবি এই বিরলে””
মাইকেল কবি মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজোড়িত খুলনার কয়রা উপজেলার সদরে কপোতাক্ষ নদের সরকারি চর অবৈধভাবে স্থানীয়দের কাছে লীজ দিচ্ছে শিবির পরিচালিত গোবরা গ্রামের “”বন্ধন তরুণ সংঘ”” নামে একটি অনিবন্ধিত সামাজিক সংগঠন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কপোতাক্ষ নদের চরে ও বনে মাছ ধরার জন্য মাছের পোনা শিকারীদের কাছ থেকে আট থেকে বারো হাজার মাসিক চুক্তিতে চরের অংশ বিক্রি করে দিচ্ছে শিবির পরিচালিত বন্ধন তরুণ সংঘ। সোমবার নিলামের মাধ্যমে চরের অংশ স্থানীয় মৎস্য পোনা শিকারী রাজু সানা,জাহাঙ্গীর ঢালী,সাঈদ গাজীর কাছে মাসিক চুক্তিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
নিলামে অংশ নেওয়া জাহাঙ্গীর হোসেন ঢালী বলেন,আমি সহ গোবরা গ্রামের ১৮ থেকে ২০ জন নিলামে অংশ নিয়ে বন্ধন তরুণ সংঘের কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে সরকারি চরের অংশ লিজ নিয়েছি।সরকারি চর একটি সংগঠন কিভাবে লিজ দিচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন চরটি তাদের অংশ।
কিন্তু ডিসি, এসিল্যান্ড,সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব নদীর চর ও জমি রক্ষা করা।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল্লাহ মিস্ত্রী বলেন,সরকারি চরের জমি অবৈধ ভাবে লিজ দিয়ে ব্যবসা করছে অবৈধ সংগঠনটি।কোন নদীর জায়গা দখল, ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রীর কড়া হুশিয়ারী রয়েছে এদিকে হাইকোর্টেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।তারপরও সরকারি চরের জমি প্রকাশ্য বিক্রি করে দিলো অথচ প্রশাসন কিছুই জানে না।
গোবরা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ডি.এম আব্দুল গফফার বলেন,গ্রামের গরিব মানুষ নদীতে মাছ ধরবে এর জন্য কেহ সরকারি চর বিক্রি করে টাকা নিলে বিষয়টি দুঃখজনক।নদীর চর অবৈধ ভাবে দখল ও লিজ দেওয়া বে-আইনী।এলাকার মানুষ নদীতে টাকা ছাড়া মাছ ধরুক এটা আশা করি।
বন্ধন তরুণ সংঘের সভাপতি জি এম নাহিয়ান বিন মোজাহিদ বলেন,সামাজিক কাজ করার জন্য টাকা প্রয়োজন,এজন্য সরকারি চর দুমাসের জন্য নিলামে দেওয়া হয়েছিল।নদী চর ভরাট করে মাঠ বানানো হয়েছিল,চরের কিছু অংশ এখনোও টাকার অভাবে ভরাট করা হয়নি।তাই দুমাসের জন্য চর নিলামে দেওয়া হয়।
কয়রা উপজেলার সদ্য যোগদানকৃত সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন,বিষয় টি তিনি জানেন না। তবে কেহ অভিযোগ করলে প্রয়োজণীয় আইনানুগ
ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ডঃ মনজুর আহম্মেদ চৌধুরী এক সময় বলেছিলেন বালুর চর, নদীর চর এ গুলো নদীর অববাহিকায় হওয়ায় নদীর জমি এর মালিক সরকার ও জনসাধারণ।
নদীর জমি বিক্রয় করা যাবেনা । ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা যাবে না। নদ নদী জনঅধিকার সম্পত্তি। এখানে সকলের সমান অধিকার থাকবে,এমন কি কাউকে লীজ দেওয়া যাবে না। সকলের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে সরকার এর স্বত্ত্ব নিজের কাছে রেখে দেবে। এটা ১ নং খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ আছে। সরকারের এই সম্পত্তির মালিক সর্ব সাধারণ।
এই জমি বা নদীর চর রক্ষার দায়িত্ব কালেক্টর বা ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, সার্ভেয়ার সহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
ডিসি ইউএনও এসিল্যান্ড কে না জানাইয়া শিবির পরিচালিত গোবরা “বন্ধন তরুণ সংঘ” কিভাবে লীজ দেয় বিষয়টি টক অফ দা টাউনে পরিনত হয়েছে কয়রা সদরে।